গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দুটি রেঞ্জের আওতাধীন বনবিভাগের জমি দখল করে পাকা ঘরসহ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করতে দেখা গেছে। বনের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের জন্য রাতের আঁধারে মূল্যবান গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অভিযোগ আছে, বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে এ সব কাজে সহায়তা করছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার ছাপরামসজিদ, পূর্বচান্দরা, কালামপুর, বক্তারপুর, হাবিবপুর, মোল্লাপাড়া, চান্দুরা, পল্লীবিদুৎ এলাকায় বনবিভাগের জমি দখল করে গাছ কেটে রাস্তা, আধাপাকা ঘর ও দোকানপাট বানানো হচ্ছে। এসব এলাকায় কয়েক হাজার একর জমি বনবিভাগের নামে থাকলেও দিনের পর দিন অবৈধ দখলদারদের কাছে চলে যাচ্ছে। নির্মাণ হচ্ছে শিল্পকারখানা আর শত শত বসতবাড়ি।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় যাওয়ার আগেই বনবিভাগের চন্দ্রা রেঞ্জ অফিস। ওই অফিসের দায়িত্বে আছেন রেঞ্জার আশরাফুল ইসলাম দোলন ও বিট কর্মকর্তা শরীফ খান চৌধুরী। আছেন বেশ কয়েকজন বন পাহারাদার। তাদের অফিসের পাশের শতাধিক মূল্যবান শালগাছ বিষাক্ত ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আধাপাকা ঘরবাড়ি।
কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম এক মাস আগে চন্দ্রা রেঞ্জ অফিসের এক কর্মকর্তাকে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে ঘর নির্মাণ করেন। কিন্তু এলাকাবাসী ও সংবাদকর্মীদের অভিযোগের কারণে বাধ্য হয়ে অভিযান চালিয়ে সেই ঘরের কিছু অংশ ভেঙে দিয়েছে বনবিভাগ।
উপজেলার বক্তারপুর এলাকায় বনের জমি কেটে রাস্তা করে ফ্যাক্টরি করছে সোহাগ পল্লীর সাবেক মালিক আবদুল জলিল।
উপজেলার ছাপরামসজিদ এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, তাদের এলাকায় কয়েকশত ঘর আছে বনের জমিতে। প্রতিটি ঘর নির্মাণের জন্য বনবিভাগের কর্মকর্তাদের ১ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাদের ঘর ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
কয়েক কিলোমিটার সামনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার মাটিকাটা রেললাইন এলাকায় সোহাগ নামের একজন বনবিভাগকে ম্যানেজ করে টিনশেট দোকান তৈরি করছেন।
সোহাগ বলেন, “বনের জমিতে আগে থেকে আমার ঘর ছিল। সেই ঘর ইট দিয়ে একটু বড় করেছি।”
এ বিষয়ে চন্দ্রা বিট অফিসের অফিসার শরিফ খান বলেন, “বনের জায়গা দিয়ে রাস্তা নিয়ে যারা কারখানা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি। পরে তারা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসেছেন। ঘর ভাঙতে গেলে নানা ধরনের তদবির করেন। তাহলে উচ্ছেদ করব কীভাবে?”
মাটিকাটা রেললাইন এলাকার দোকান নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা একটি টিনসেট বিল্ডিং করছিলেন, সেটার কিছু অংশ ভেঙে দিয়েছি।”